মা মরার পর থেকে 'পথশিশু' পরিচয় মোবারকের।

 





গল্পে গল্পে জীবন। 
গল্প: ০২

বছর তিনেক আগে মা হারায় মো. মোবারক হোসেন। এরপর থেকে পথশিশু পরিচয়ে তার জীবন শুরু। পরিবারে অসুস্থ্য বাবা ছাড়া কেউ নেই। অভাগা যেখানে যায়, সেখানে জল শুকায়। পৃথিবীর একমাত্র আপনজন বাবাও কিডনিজনিত রোগে আক্রান্ত। চট্টগ্রাম নগরীর ষোলশহর রেলওয়ে স্টেশনের প্ল্যাটফর্ম দুজনের স্থায়ী ঠিকানা। পত্রিকার বিক্রি পথশিশু মোবারকের পেশা। অনেক সময় মানুষের ফেলা দেওয়া বোতল কুড়িয়েও তা বিক্রি করে সে। তাই বস্তিতেও ছোট ঘর ভাড়া নেওয়ার উপক্রম পর্যন্ত নেই।

মা কীভাবে মারা যায়- এ স্মৃতিও তার স্পষ্ট মনে নেই। এখন বয়স কতইবা হবে! নয় কিংবা দশ। এ হিসেবে তিন বছর আগে মা হারানোর সময় বয়স ছয়-সাত ছিল। এজন্য কিছু মনে নেই। সে তার বয়সও জানে না। তবে মোবারকের মা বেঁচে থাকার দিনগুলো ভালো ছিল- এটুকু তার মনে আছে। কষ্ট করে পয়সা কামাই করত হতো না। মোবারক বলে, “মা কীভাবে মারা গেছে মনে নেই। অসুখে মারা গেছে বলে জানি। মা বেঁচে থাকতেই বাবার কিডনির সমস্যা ধরা পড়েছিল। মা হারানোর পর থেকে বাবার দায়িত্বও আমার। অসুখের কারণে বাবা সারাদিন ঘুমায়। কোন কাজ করতে পারেন না। পত্রিকা বিক্রি করি বা বোতন কুড়ায়ে বিক্রি করি।”

মোবারক ষোলশহর স্টেশনে, দুই নম্বর গেট এলাকা, ফিনলে স্কয়ারের সামনে পত্রিকা বিক্রি করে। বেশিরভাগ সময় ষোলশহর স্টেশনের শাটলে আসা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাই তার পত্রিকার ক্রেতা। টাকার অভাবে বাবার চিকিৎসা বন্ধ। দুয়েক বার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা টাকা তুলে তার বাবাকে ডাক্তার দেখিয়েছিলেন।

বছর খানেক ধরে পত্রিকা বিক্রি করে মোবারক। দৈনিক মোট ১০-১২টি পত্রিকা বিক্রি করতে পারে। কোন দিন পত্রিকা বিক্রি করতে না পারলে, রাস্তাঘাটে বোতল কুড়ায়। প্রতি পত্রিকায় ৩ টাকা লাভ হয়। অথবা বোতল বিক্রির প্রায় করে  ২০-৫০ টাকায় আয় হয়। এ টাকা পুরোটাই বাবার হাতে তুলে দেয় সে। এ টাকায় কি আর খাবার কেনা যায়! স্টেশনে আসা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে খাবার খুঁজে নেয় সে। এই খাবারেই বাবা-ছেলের দিন চলে।

মা বেঁচে থাকায় অবস্থায় স্কুলে পড়তো মোবারক। তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করেছে সে। বাবার অসুস্থতা ধরা পড়ে, এর মায়ের মৃত্যু হয়। এরসঙ্গে তার স্বাভাবিক শৈশব থেমে যায়।

Post a Comment

Previous Post Next Post